নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাউজান উপজেলা গত ২৯ অক্টোবর ডাকাতি করে ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় ডাকাত দল। এরপর গত ৯ নভেম্বর অথাৎ ১২ দিন পরে মামলা করেন ভুক্তভোগী পরিবার। মামলার পরে র্যাবের টানা ১২দিনের অভিযান শেষে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ ৮ ডাকাত ধরতে সক্ষম হয়েছে।
গত বুধবার সকালে র্যাব ৭ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এমএ ইউসুফ চৌধুরী পিএসসি প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের ঘটনার বর্ণনা করেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ঘটনার ভুক্তভোগী ভিকটিম মোহাম্মদ সরোয়ার চৌধুরী (৩৫), পিতা-মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, মাতা-উম্মে সালমা, সাং-সুলতান পাড়া, ছত্রপাড়া, হাজী মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর বাড়ি, থানা-রাউজান, জেলা-চট্টগ্রাম একজন প্রবাসী ও রেমিট্যান্স যোদ্ধা।
তিনি গত ২৭ অক্টোবর দুবাই হতে বাংলাদেশে এসেছেন। গত ২৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী ভিকটিম তার মামার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে সে ও তার পরিবারের লোকজন নিজ বাড়ি হতে আধা কিলোমিটার দূরে মামার বাড়িতে যান। সে সময় ঘরে তার বৃদ্ধ বাবা ছাড়া আর কোনো মানুষ ছিলোনা।
বিজ্ঞাপন
এই সুযোগে গভীর রাতে একদল ডাকাত ভিকটিম মোহাম্মদ সরোয়ার চৌধুরীর পাকা ঘরের পিছনে লোহার জানালার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে তার বৃদ্ধ বাবা কে কম্বল দিয়ে চেপে ধরে চোখ মুখ ও হাত পা বেধে গলায় চাকু ধরে হত্যার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে আলমারির চাবি নিয়ে নেয়।
ডাকাত দলের মধ্যে হতে মোঃ মুসা নামক একজন ব্যক্তি ভিকটিমের বাবার গলায় চাকু ধরে রাখে এবং চিৎকার করলে জবাই করে ফেলবে বলে হুমকি প্রদান করে। এসময় ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যরা আলমারীতে রক্ষিত অবস্থায় থাকা ভিকটিমের স্ত্রী, মা, বোনের স্বর্ণালংকার এবং অপরাপর আত্বীয় স্বজনের আমানত স্বরুপ রাখা স্বর্ণালংকারসহ সর্বমমোট ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে।
এছাড়াও ডাকাত দল ভিকটিমের মামাতো বোনের বিবাহের জন্য ঘরে রাখা নগদ ০৫ লক্ষ টাকা, উন্নতমানের ০৫ মোবাইল এবং ০১টি স্যামসাং ব্রান্ডের ট্যাব লুট করে। উল্লেখ্য, উক্ত ডাকাত দল পরিকল্পনা করে গত ২৯ অক্টোবর রাত আনুমানিক ১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত ভিকটিমের বৃদ্ধ বাবাকে বাধা অবস্থায় রেখে উপরে উল্লেখিত মালামালসহ বাড়ি থেকে বেড় হয়ে যায়। পরবর্তীতে গত ৯ নভেম্বর ভুক্তভোগী ভিকটিম মোহাম্মদ সরোয়ার চৌধুরী বাদী হয়ে উক্ত দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানায় একটি ডাকাতি মামলা দয়ের করে যার মামলা নং-৭৭/০৯ নভেম্বর ২০২২খ্রিঃ, ধারা ৪৫৭/৩৮০ পেনাল কোড ১৮৬০।
তিনি বলেন, উক্ত দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনাটি লোমহর্ষক , চাঞ্চল্যকর ও রহস্যজনক হওয়ায় ডাকাতির মূল আসামী গ্রেফতার ও মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য ভুক্তভোগী ভিকটিম মোহাম্মদ সরোয়ার চৌধুরী কর্তৃক অধিনায়ক, র্যাব-০৭, চট্টগ্রাম বরাবর একটি লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম উক্ত ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত মূল আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে।
এরই ধারাবাহিকতায় বিশেষ সংবাদের ভিত্তিতে গত ২১ নভেম্বর বিকেলে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানাধীন দক্ষিণ গহিরা সিবের ঘাট এলাকার একটি বাসা বাড়ি হতে আসামী মুসা কে গ্রেফতার করা হয় এবং তার হেফাজত হতে ডাকাতি হওয়া নগদ ৫ লক্ষ টাকা এবং ডাকাতি হওয়া স্বর্ণালংকার বিক্রয়ের ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকাসহ সর্বমোট-৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা উদ্ধার করার হয়। ডাকাত দলের সদস্য ধৃত আসামী মুসার দেয়ার তথ্য মতে ডাকাত দলের সদস্য ২। সাইদুল ইসলাম প্রকাশ সাইফুল কে একই দিনে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানাধীন গহিরার উত্তর-পূর্ব কোতোয়ালী ঘোনা দলই নগরস্থ একটি বাড়ি হতে গ্রেফতার করা হয়।
হাটহাজারী নিউজ
পরবর্তীতে তাদের দেয়া তথ্যমতে রাউজান ও হাটহাজারী থানা এলাকার বিভিন্ন স্থান হতে ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্য ৩। খোরশেদুল আলম (২৮), ৪। সাজ্জাদ হোসেন (২৭), ৫। মোঃ বাপ্পি (২৬), ৬। সজল শীল (২৭), ৭। মোঃ ইদ্রিস প্রকাশ কাজল (৩৪)’দের গ্রেফতার করা হয় এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহার্য গ্রিল কাটার, ছোরা, টর্চ লাইটসহ ডাকাতি হওয়া বিভিন্ন ধরণের সর্বমোট ৪৬ ভরি স্বর্ণালংকার ও কয়েন এবং ডাকাতি হওয়া স্বর্ণের বিক্রয়লব্দ মোট ৩০,০১,৬০০/- টাকা উদ্ধার ও ডাকাতি মালামাল গ্রহণকারী ৮। বিপ্লব চন্দ্র সাহা(৩৮) এর জুয়েলার্সের দোকান হতে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে উপস্থিস স্বাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা উল্লেখিত ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা অকপটে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়